Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Classic Header

{fbt_classic_header}

Top Ad

LATEST UPDATES:

latest

বাংলাদেশে বেকার এত কম দেখায় কেন?

আপনি সপ্তাহে এক দিন এক ঘণ্টা কাজ করলেন। ওই কাজের জন্য কিছু মজুরি পেলেন। আপনার নাম আর বেকারের খাতায় থাকবে না। আপনি ওই টাকা দিয়ে জীবনধারণ করত...

আপনি সপ্তাহে এক দিন এক ঘণ্টা কাজ করলেন। ওই কাজের জন্য কিছু মজুরি পেলেন। আপনার নাম আর বেকারের খাতায় থাকবে না। আপনি ওই টাকা দিয়ে জীবনধারণ করতে পারেন, আর না পারেন—আপনি কর্মজীবী মানুষের তালিকায় চলে যাবেন। বেকার নিয়ে আন্তর্জাতিক শ্রম (আইএলও) সংস্থা হলো কাজপ্রত্যাশী হওয়া সত্ত্বেও সপ্তাহে এক দিন এক ঘণ্টা কাজের সুযোগ না পেলে ওই ব্যক্তি বেকার হিসেবে ধরা হবে। এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সংজ্ঞা। মূলত এই সংজ্ঞার কারণেই বাংলাদেশে বেকার কম। এই সংজ্ঞার কারণে বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা মাত্র ২৭ লাখ।

তাহলে বাংলাদেশের শ্রমিকদের মজুরি কত, এই মজুরি দিয়ে কি জীবনধারণ সম্ভব? এই প্রশ্নগুলো চলে আসে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, বাংলাদেশে একজন কৃষিশ্রমিকের দৈনিক মজুরি গড়ে ৩৬৬ টাকা মজুরি পান। ঘণ্টায় মজুরি ৪৮ টাকা। ওই কৃষিশ্রমিক যদি সপ্তাহে এক দিন এক ঘণ্টা কাজ করার সুযোগ পান, তাহলে সপ্তাহের আয় হবে মাত্র ৪৮ টাকা। এই টাকা আয় করলেই তিনি আরও বেকার থাকবেন না।


বেকারের এই সংজ্ঞার কারণে বাংলাদেশে বেকারসংখ্যা অত্যন্ত কম। বিবিএসের সর্বশেষ ২০১৭ শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, সারা দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ৬ কোটি ৩৫ লাখ। এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে কাজ করেন ৬ কোটি ৮ লাখ নারী-পুরুষ। আর ২৭ লাখ বেকার। বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ।

আইএলওর সংজ্ঞার জন্য বেকারসংখ্যা কম থাকায় বিবিএস আরেকটি নতুন মানদণ্ড ঠিক করেছে। সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজের সুযোগ পান না, তাঁরা সম্ভাবনাময়, কিন্তু কাজে লাগানো যাচ্ছে না (লেবার আন্ডার ইউটিলাইজেশন)। এদের ছদ্ম বেকার বলা যায়। দেশে এখন এমন মানুষ আছেন প্রায় ৬৬ লাখ। এরা পছন্দমতো কাজ না পেয়ে টিউশনি, রাইড শেয়ারিং, ফাস্টফুডের দোকানের বিক্রয়কর্মী, কলসেন্টারের কর্মীসহ বিভিন্ন ধরনের খণ্ডকালীন কাজ করছেন। তাঁরা যে আয় করেন, তা দিয়েও মানসম্পন্ন জীবনের নিশ্চয়তা দেয় না।

বেকারত্বের এই সর্বজনীন সংজ্ঞার কারণে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে বেকারের সংখ্যা এত কম। ওই সব দেশে আর্থসামাজিক অবস্থা উন্নত জীবনের নিশ্চয়তা দেয় না। এসব দেশের বড় অংশ দরিদ্র, বেকার ভাতা প্রায় নেই বললেই চলে। জীবনধারণের জন্য কোনো না কোনো কাজে নিয়োজিত থাকতে হয়—যা মোটেও শোভন কাজ নয়, মজুরির দিক থেকেও বেশ কম। বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্রের প্রায় ৮৫ শতাংশই অনানুষ্ঠানিক খাতের। তাই কাজ খোঁজার আনুষ্ঠানিক কোনো প্রক্রিয়া নেই। আবার বেতনভাতা কত হবে—এর কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মালিকপক্ষের ইচ্ছার ওপরেই মজুরি নির্ধারণ করা হয়। অন্যদিকে উন্নত দেশগুলোর শ্রমবাজার শিল্প ও সেবা খাতনির্ভর। এসব দেশের শ্রমবাজার কাঠামোগত বেশ শক্তিশালী। অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজের সুযোগ নেই বললেই চলে। এসব দেশের কর্মজীবীরা যে মজুরি পান, তা দিয়ে মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত।

বাংলাদেশে বেকারের শ্রেণি নেই। অনেক দেশে স্বল্প মেয়াদের বেকারত্বের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি বেকারত্ব, মৌসুম বেকারত্ব ও প্রচ্ছন্ন বেকারত্ব আছে। যুক্তরাষ্ট্রে ছয় মাস কাজ না করলে এবং ইউরোপে এক বছর কাজ না পেলে দীর্ঘমেয়াদি বেকার বলা হয়। এক সময় বাংলাদেশে উত্তরাঞ্চলে মঙ্গার কারণে অনেকে মৌসুমি বেকার হয়েছেন।